সংবাদ শিরোনাম

উদ্বোধনের আগেই খুলনা জেলা কারাগারের নতুন ভবনে ফাটল ব্যয় বেড়ে ২৮৮ কোটি, শেষ হয়নি এক যুগের প্রকল্প

 প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০১:৪৪ অপরাহ্ন   |   জেলার খবর

উদ্বোধনের আগেই খুলনা জেলা কারাগারের নতুন ভবনে ফাটল    ব্যয় বেড়ে ২৮৮ কোটি, শেষ হয়নি এক যুগের প্রকল্প

খুলনা প্রতিনিধি:

উদ্বোধনের আগেই খুলনা জেলা কারাগারের নতুন ভবনে ধরা পড়েছে একের পর এক ত্রুটি। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই প্রকল্পে কোথাও ফাটল ধরা দেয়াল, কোথাও ভেঙে পড়া জানালা-সিঁড়ি, আবার কোথাও বেজমেন্টে পানি প্রবেশ করছে। সব মিলিয়ে প্রকল্পটি নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে খুলনাবাসীর মধ্যে।

২০১১ সালে একনেক সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। তখন ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৪৪ কোটি টাকা। পরে ২০১৭ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৫১ কোটি এবং সর্বশেষ ২০২৩ সালের মে মাসে সংশোধিত বাজেটে ব্যয় দাঁড়ায় ২৮৮ কোটিতে। তবে তিন দফা ব্যয় বাড়লেও এক যুগ পেরিয়ে গেলেও এখনো শেষ হয়নি কাজ। চলতি বছরের জুনে প্রকল্প সম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি।

প্রকল্পটি ৩৮টি প্যাকেজে ভাগ করে দেওয়া হয়। এর মধ্যে এস এন বিল্ডার্স ১৩টি, মধু ট্রেডার্স ৭টি, রাফিদ ট্রেডার্স ৪টি এবং বাকিগুলো অন্য ঠিকাদারদের মধ্যে বণ্টন করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার, পুরনো লোহা রং করে নতুন হিসেবে দেখানো এবং কাজ শেষ না করেই টাকা তুলে নেওয়ার।

এস এন বিল্ডার্সের প্রোপাইটার মো. দাউদ হায়দার বলেন, “আমি কাজ বুঝিয়ে দিয়েছি, টাকাও তুলে নিয়েছি। এরপর কি হবে সেটা আমার বিষয় নয়।” অন্যদিকে মধু ট্রেডার্সের প্রোপাইটার শফিকুল ইসলাম মধু দাবি করেন, “আমার কাজ ঠিকভাবে শেষ হয়েছে। অধিকাংশ কাজ করেছে এস এন বিল্ডার্স।”

কারাগার কর্তৃপক্ষ জানায়, গণপূর্ত থেকে বুঝে নেওয়ার আগেই ভবনের নানা স্থাপনায় ত্রুটি ধরা পড়ে। এর মধ্যে রয়েছে মসজিদে পানি প্রবেশ, মহিলা সেলের ছাদ থেকে পানি পড়া, আবাসিক ভবন অসম্পূর্ণ থাকা, ওয়ার্কওয়ে দেবে যাওয়া এবং পেরিমিটার ওয়াল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়া।

জেল সুপার মো. নাসির উদ্দিন বলেন, “৩৮টি প্যাকেজের মধ্যে মাত্র একটি বুঝে নেওয়া গেছে। বাকিগুলোতে ১১৬টি ত্রুটি চিহ্নিত করে আমরা গণপূর্ত বিভাগকে জানিয়েছি।”

খুলনার সচেতন নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার বলেন, “সংবেদনশীল স্থাপনায় উদ্বোধনের আগেই ফাটল ধরা প্রমাণ করে ভয়াবহ দুর্নীতি হয়েছে। ঠিকাদাররা টাকা তুলেও নিয়েছেন। এই ভবনগুলো দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা নেই।”

অভিযোগ নাকচ করে গণপূর্ত-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান বলেন, “ঠিকাদারদের টাকা না দিলে প্রকল্প শেষ করা সম্ভব হতো না। ছোটখাটো কিছু ত্রুটি থাকলেও মেরামত করলে ঠিক হয়ে যাবে।”

অভিযোগের বিষয়ে অধিকাংশ ঠিকাদার প্রকাশ্যে কিছু বলতে চাননি। তবে ফোনে তারা জানান, “সব কাজ নিয়ম মেনেই হয়েছে। কিছু ত্রুটি থাকলেও তা সংশোধন করা সম্ভব।”##