সংবাদ শিরোনাম

সহজ উপায়ে কাচ্চি বিরিয়ানি রেসিপি (ঢাকাই স্টাইলে)

 প্রকাশ: ০৪ অগাস্ট ২০২৫, ০৯:৪৩ অপরাহ্ন   |   লাইফস্টাইল

সহজ উপায়ে কাচ্চি বিরিয়ানি রেসিপি (ঢাকাই স্টাইলে)

বাংলাদেশে এবং উপমহাদেশে কাচ্চি বিরিয়ানি একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় ও সুস্বাদু খাবার। এটি বিশেষ করে উৎসব, বিয়ে, আকিকা কিংবা পারিবারিক আয়োজনে পরিবেশিত হয়। 'কাচ্চি' শব্দটি এসেছে 'কাঁচা' থেকে, অর্থাৎ এখানে মাংস এবং চাল একসঙ্গে কাঁচা অবস্থায় দমে (বাষ্পে) রান্না করা হয়। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মাংস ও চালের স্বাদ একসঙ্গে মিশে এক অনন্য স্বাদ তৈরি করে।

 ধাপ ১: মাংস বাছাই ও প্রস্তুতি:কাচ্চির জন্য সাধারণত খাসির মাংসই বেশি ব্যবহার করা হয়। খাসির মাংস তুলনামূলকভাবে কোমল এবং রান্নার পরে বিশেষ স্বাদ দেয়। মাংস ভালোভাবে ধুয়ে, পানি ঝরিয়ে নিন। এরপর একে মাঝারি আকারে টুকরা করে রাখুন। হাড়সহ টুকরাগুলো হলে বেশি ভালো হয়, কারণ হাড় থেকে একটি প্রাকৃতিক ঝোল বা ফ্লেভার বের হয়।

উপকরণ (মাংসের জন্য): খাসির মাংস – ১ কেজি টক দই – ১ কাপ আদা বাটা – ২ টেবিল চামচ রসুন বাটা – ১ টেবিল চামচ পেঁয়াজ বাটা – ২ টেবিল চামচ কাঁচা মরিচ বাটা – ১ টেবিল চামচ লবণ – পরিমাণমতো ধনে গুঁড়া – ১ চা চামচ জিরা গুঁড়া – ১ চা চামচ গরম মসলা গুঁড়া – ১ চা চামচশুকনা মরিচ গুঁড়া – ১ চা চামচ দারুচিনি, এলাচ, লবঙ্গ – কয়েকটি করে,জায়ফল ও জয়িত্রী গুঁড়া – অল্প পরিমাণে,কেওড়া জল – ২ টেবিল চামচ,গোলাপ জল – ১ টেবিল চামচ,সরিষার তেল – ১/২ কাপ,পেঁয়াজ বেরেস্তা – ১ কাপ

ম্যারিনেশন:সব উপকরণ একত্রে মাংসের সঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে কমপক্ষে ৬ ঘণ্টা (সর্বোত্তম ফলাফলের জন্য রাতভর) ম্যারিনেট করে রাখুন। এটি কাচ্চির আসল স্বাদ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ।

ধাপ ২: চাল প্রস্তুত:চাল সাধারণত বাসমতি, মিনিকেট বা কলমকারি ব্যবহার করা হয়। ঝরঝরে ভাতের জন্য চালের মান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। উপকরণ (চালের জন্য):চাল – ৭০০ গ্রাম,লবণ – স্বাদমতো,দারুচিনি, এলাচ, লবঙ্গ – ২–৩টি করে,তেজপাতা – ২টি,ঘি – ১ টেবিল চামচ

,প্রস্তুতি:চাল ধুয়ে আধা ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। এরপর একটি বড় পাত্রে পানি ফুটিয়ে তাতে চাল দিন। সঙ্গে গোটা মসলা এবং লবণ দিয়ে দিন। চাল ৭০% পর্যন্ত সেদ্ধ হলে নামিয়ে পানি ঝরিয়ে রাখুন।

ধাপ ৩: বেরেস্তা তৈরি উপকরণ:পেঁয়াজ – ৪–৫টি (পাতলা কুচি করে)ডুবো তেলে পেঁয়াজ কুচিগুলো মাঝারি আঁচে বাদামি করে ভেজে ফেলুন। এটাই বেরেস্তা। এটি কাচ্চির ফ্লেভার এবং রঙের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।  ধাপ ৪: কাচ্চি লেয়ারিং এবং রান্না (দম)এবার আসল ধাপ—চুলায় হাঁড়িতে চাল ও মাংস একসাথে রেখে দমে রান্না করা।

প্রস্তুতি ধাপ:1. একটি বড় হ্যন্ডি/দুধের হাঁড়ি নিন। এতে প্রথমে ম্যারিনেট করা মাংস সমানভাবে বিছিয়ে দিন। 2. মাংসের উপরে কিছু বেরেস্তা ছিটিয়ে দিন। 3. এরপর ৭০% সিদ্ধ করা চাল বিছিয়ে দিন। চালের উপর আরও বেরেস্তা, কিছু কেওড়া জল, গোলাপ জল এবং ঘি ছিটিয়ে দিন। 4. চাইলে জাফরান ১/৪ কাপ গরম দুধে ভিজিয়ে চালের উপর ছিটিয়ে দিন (রঙ ও ঘ্রাণের জন্য)।

দম দেওয়া:হাঁড়ির মুখ এয়ারটাইট করে দিন। ময়দা দিয়ে মুখ সিল করে নিন যেন বাষ্প বাইরে না যেতে পারে।প্রথমে মাঝারি আঁচে ১৫–২০ মিনিট, এরপর খুব কম আঁচে ৪০–৫০ মিনিট রাখুন। এভাবে মোট ১ ঘণ্টা–১ ঘণ্টা ১৫ মিনিট দম দিলেই কাচ্চি রান্না হয়ে যাবে।

 ধাপ ৫: পরিবেশন: হাঁড়ি থেকে সাবধানে ঢাকনা খুলুন। সুন্দর ঘ্রাণে ভরে যাবে চারপাশ। বড় চামচ দিয়ে নিচ থেকে ওপরে টেনে টেনে পরিবেশন করুন যেন চাল ও মাংসের স্তর ঠিক থাকে। কাচ্চি পরিবেশন করা হয় সাধারণত:বোরহানি,ডিম সেদ্ধ,সালাদ,টক দই বা রায়তা,পাপড় বা আলুভাজ

 টিপস এবং সতর্কতা:1. মাংস কাঁচা থাকা চলবে না। দম দেওয়ার পর চেখে দেখে নিন, যদি কাঁচা লাগে তবে আরও কিছু সময় দমে রাখুন।2. চাল বেশি সেদ্ধ হলে কাচ্চি নরম ও আঠালো হয়ে যায়। তাই ৭০% সিদ্ধ করাই আদর্শ।3. চাল ও মাংসের স্তর সঠিকভাবে দিতে হবে। ভুল স্তর দিলে স্বাদ একত্রে মেশে না।4. বেরেস্তা পুড়িয়ে ফেলবেন না। হালকা বাদামি রঙেই নামিয়ে ফেলুন।5. ম্যারিনেশন যত ভালো হবে, মাংস তত নরম ও স্বাদযুক্ত হবে

উপকরণ পরিমাণ:খাসির মাংস ১ কেজি-চাল ৭০০ গ্রাম -টক দই ১ কাপ- আদা-রসুন বাটা ৩ টেবিল চামচ- পেঁয়াজ বাটা ২ টেবিল চামচ- শুকনা ও গরম মসলা প্রয়োজন মতো- পেঁয়াজ বেরেস্তা ১ কাপ -কেওড়া ও গোলাপ জল ৩ টেবিল চামচ- ঘি বা তেল ১/২ কাপ -লবণ স্বাদমতো

অতএব,কাচ্চি বিরিয়ানি একটি ধৈর্য, পরিকল্পনা এবং প্রেম দিয়ে বানানো রান্না। এর প্রতিটি স্তর এবং ধাপে পরিশ্রম আছে, কিন্তু ফলাফল অসাধারণ! ঘরে বানানো কাচ্চি শুধু পরিবারের সদস্যদের মন ভরায় না, বরং আনন্দের উপলক্ষ তৈরি করে। আপনি যদি উপরের ধাপগুলো মনোযোগসহকারে অনুসরণ করেন, তাহলে নিশ্চিতভাবে দারুণ স্বাদের কাচ্চি তৈরি করতে পারবেন।