সংবাদ শিরোনাম

সোরিয়াসিস রোগের কার্যকরি কিছু হোমিওপ্যাথিক ঔষধ

 প্রকাশ: ১১ মে ২০২৫, ০৩:৪৩ অপরাহ্ন   |   লাইফস্টাইল

সোরিয়াসিস রোগের কার্যকরি  কিছু হোমিওপ্যাথিক ঔষধ

তার আগে জেনে নেওয়া দরকার,  সোরিয়াসিস কি রোগ ? এবং কেন হয়।

সোরিয়াসিস ত্বকের একটি

 প্রদাহজনিত রোগ। এটি একটি জটিল রোগ। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে যে কোনো বয়সীরা এ রোগে আক্তান্ত হতে পারে। তবে ত্রিশোর্ধ্বরা বেশি আক্রান্ত হয়। এটি সংক্রামক রোগ নয়, কাজেই সংস্পর্শের মাধ্যমে ছড়ায় না।মানুষের ত্বকের কোষস্তর প্রতিনিয়ত মারা যায় এবং নতুন করে তৈরি হয়। সোরিয়াসিসে এই কোষ বৃদ্ধির হার অস্বাভাবিক হয়ে ওঠে। যেমন ত্বকের সবচেয়ে গভীরের স্তর থেকে নতুন কেরাটিনোসাইট কোষ ওপরের স্তরে আসতে স্বাভাবিকভাবে সময় নেয় ২৮ দিন, আর এ ক্ষেত্রে তা পাঁচ থেকে সাত দিন। কয়েক মিলিমিটার থেকে কয়েক সেন্টিমিটার জায়গাজুড়ে এই সমস্যা দেখা দেয়। ত্বকের বিভিন্ন স্থানে সাদা আঁশের মতো খসখসে শুকনো এবং এতে ত্বক লালচে হয়ে ফুলে ওঠে ও সুরসুরি করে কখনো চুলকাই, এর কারনে আমাদের পরিবেশে যে হাজারো  ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস যা আমাদের শরীরের সংস্পর্শে আসে তা কখনো আমাদের ক্ষতি করে বা ভালো করে কিন্তু সুস্থ শরীরে বেশিক্ষণ স্থায়ী থেকে না, কিন্তু সোরিয়াসিস রোগীর দেহে স্থায়ী অবস্থান করতে পারে, কারন সোরিয়াসিস ক্ষত। পৃথিবীতে ১ থেকে ২ শতাংশ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত। সারা বিশ্বে ১৩ কোটি মানুষ এই রোগে আক্রান্ত। ২৯ শে অক্টোবর বিশ্ব সোরিয়াসিস দিবস পালন করা হয় এবং মানুষকে সচেতন করা হয়। 

এই রোগ কেন হয়? 

একটাই উত্তর অটো ইমিউন ডিজঅর্ডার 

এখন প্রশ্ন অটোইমিউন ডিজঅর্ডার কি

 যেখানে একজন লোকের ইমিউন সিস্টেম ভুলবশত তার শরীরকে আক্রমণ করে। আরো সহজ ভাবে বললে, বাইরের কোনো ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণুর প্রভাব ছাড়াই রোগ সৃষ্টি হয় কারণ শরীরের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা কোনো সুস্থ কোষকে ক্ষতিকর মনে করে তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে।

সাধারণত ইমিউন সিস্টেম ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের মতো জীবাণু থেকে আমাদেরকে সুরক্ষা দেয়- যখন ইমিউন সিস্টেম বুঝতে পারে যে শরীরে আক্রমণকারী প্রবেশ করেছে, তখন এটি এসব শত্রুকে আক্রমণ করতে অ্যান্টিবডি নিঃসরণ করে। সাধারণত ইমিউন সিস্টেম শত্রু কোষ ও সুস্থ কোষের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করতে পারে।

কিন্তু অটোইমিউন রোগের ক্ষেত্রে ইমিউন সিস্টেম শরীরের কোনো অংশকে শত্রু ভেবে ভুল করে এবং অটোঅ্যান্টিবডি নামক প্রোটিন নিঃসরণের মাধ্যমে সুস্থ কোষকে আক্রমণ করে।

ইমিউন সিস্টেম সেনাবাহিনীর মতো

ইমিউন সিস্টেম অ্যান্টিবডি নিঃসরণ করে রোগ সৃষ্টিকারী অণুজীব থেকে আমাদেরকে সুরক্ষিত রাখে। অ্যান্টিবডি হলো রক্তের প্রোটিন যা কোনো ঝুঁকি বা আক্রমণকারীকে নিষ্ক্রিয় করে। এটিকে বলা হয় ইমিউন রেসপন্স। সুস্থ কোষের ওপর এ আক্রমণ শরীরের যেকোনো স্থানে হতে পারে, যেমন- ত্বকে আক্রমণ হলে সোরিয়াসিস হয় ও কোষে আক্রমণ হলে ক্যানসার রোগ হয়।

অটো ইমিউন ডিজঅর্ডার কেন হয়? 

আধুনিক বিশ্বে যে আহার করি তা অধিকাংশ কেমিক্যাল যুক্ত এমনকি  এন্টিবায়োটিক সহ অন্যান্য আলোপ্যাথি ঔষধ কেমিক্যাল দিয়ে তৈরি।      পরিবেশ দূষণকারী পদার্থের সংস্পর্শে আসা,  জীবন শৈলী সঠিক ভাবে পালন না করা,  ভিটামিন ডি  অপ্রতুলতা। এছাড়া আরও অন্যান্য কারণও আছে। সেই জন্য আধুনিক বিশ্বে এই রোগ দ্রুত বাড়ছে। এখানে বলে রাখা ভালো এই রোগ  কোন ভাবে চাপা পড়লে  সোরিয়াটিক আর্থ্রাইটিস দেখা  দেয়। 

তাই এই স্টেরয়েড জাতীয় কোন ঔষধ  ব্যবহার না করা ভালো। 

*★*★*★হোমিওপ্যাথিক ঔষধ সমন্ধে বলার আগে করনীয় পরামর্শ ঃ-★*★*

১).আপনার আহারে পরিবর্তন করতে হবে মাছ,মাংস, ডিম সহ প্রাণীজ খাবার বন্ধ করতে হবে। যে সব্জিতে আপনার এলার্জেন আছে তা বন্ধ করতে হবে। 

২). প্রচুর পরিমানে সতেজ শাকসব্জী, কাঁচা পাকা ফল খেতে হবে। 

৩). কোন রকম সংরক্ষণ করা  খাবার বা কেমিক্যাল যুক্ত খাবার আহার করা উচিত নয়।

৪). সূর্যরশ্মি থেকে ভিটামিন ডি গ্রহণ করা।★*★*★

সোরায়সিস (Psoriasis)  রোগের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা 

বিষয়টি হচ্ছে- হোমিওপ্যাথি মতে যেকোন চর্মরোগ হবার মূল কারণ হচ্ছে রোগীর মধ্যে কার্যকর সোরা মায়াজম। মায়াজম ব্যাপারটি একটু জটিলতা পূর্ণ বিষয়। তাই এ নিয়ে অন্য সময় আলোচনা করবো। এখন কয়েকটি হোমিওপ্যাথিক  ঔষধ  নিয়ে আলোচনা করছি এছাড়া আরও অনেক হোমিওপ্যাথিতে ঔষধ আছে

 লক্ষ্মণ অনুযায়ী নিন্মের যে কোন একটি ঔষধ ব্যবহার করা উচিত। 

১. Carcinosin 200

এই হোমিওপ্যাথিক ঔষধটি বংশগত কারণে আক্রান্ত রোগীদের জন্য যাদের বংশের   অটো ইমিউন ডিজঅর্ডারের জন্য কোন কঠিন রোগে আক্রান্ত ছিল, যেমন ক্যানসার,সুগার,আর্থ্রাইটিস,অস্টিওআর্থ্রাইটিস,লিভার সিরোসিস আরও অনেক রোগ। 

২. Kali ars 200

 সোরিয়াটিক আর্থায়টিস সাথে সোরিয়াসিস থাকলে উপকারী। 

৩. Kali Sulph 200

 রোগীর চর্ম প্রায় শুষ্ক থাকে। এরা গরম আবহাওয়ায় খুব কষ্ট পায় ও মেজাজ খিটখিটে। ক্যালি সালফ এর রোগীদের উদ্ভেদ থেকে পাতলা হলদেটে রস নিঃসরণ হয় ও তাদের জিহ্বার গোড়ায় দিকটায় হলদেটে ক্লেদযুক্ত আবরণ থাকে। 

৪). GRAPHITS 200

গ্রাফাইটিস রোগী সাধারণত মোটা, মেদবহুল ও ফর্সা চেহারার অধিকারী হয়ে থাকে। এটি ত্বকের ক্রমাগত শুষ্কতা, সেইসাথে এবং পুরু।  উদ্ভেদ থেকে মধুর মত গাঢ় রস বের হয়।

নখের উপর, কানের পিছনে এবং কুঁচকি অঞ্চলে, ঘাড়, কাঁধ এবং হাঁটু এর বাঁকএ সোরায়সিস দেখা যায়। শুস্ক অবস্থায় মাছের আঁশের মতো পদার্থ দ্বারা আবৃত থাকে। 

৫).MEZRIUM 200

 মাথার খুলিতে আক্রান্ত বেশি হয় এবং রাতে বিছানায় গেলে বেশি করে চুলকানো র ইচ্ছে হয়। উদ্ভেদে গাঢ় অর্থাৎ ঘন পুঁজ জমে। এমনকি উক্ত পুঁজে পোঁকা হতেও দেখা 

৬). ARSENIC  IOD 200

 এখানে  সোরিয়াসিস পিঠে বেশি দেখা যায়   আক্রান্ত অংশ বিভিন্ন রং এর উদ্ভেদ বা আঁশ জাতীয় পদার্থে পরিপূর্ণ থাকে। রোগী সাধারণত হালকা পাতলা গরণের ও দুর্বল, জরাজীর্ণ শরীরের অধিকারী হয়।

৭)..ARSENIC HYDRO 200

এখানে সোরিয়াসিস লিঙ্গাগ্র চর্মে ও লিঙ্গমুন্ডে পুঁজভরা ভাসা ক্ষতযুক্ত সোরিয়াসিস।

 ৮).SEPEA 200

মহিলাদের মধ্যে সোরিয়াসিস লক্ষণ দেখা এই ঔষধ প্রধমে চিন্তা করা উচিত।  এবং মেনোপজের পর আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে । সোরিয়াসিস আক্রান্ত অংশ হলুদ বর্ণের হয়। দুর্বলতা, বিরক্তিকর আচরণ এবং উদাসীনতা দেখা দেয়। 

৯). NATRUM ARS.200

সাদা পাতলা আঁশযুক্ত সোরিয়াসিস আঁশ উঠে গেলে স্থান টি লাল হয়ে থাকে। 

১০). CLEMATIS 200  

এই ঔষধের অদ্ভুত লক্ষ্মণ  শুক্লপক্ষ প্রতিপদ থেকে পূর্ণিমা পযর্ন্ত বৃদ্ধি হয়,রস পড়ে এবং কৃষ্ণপক্ষ থেকে নিজে থেকে কমতে থাকে। আক্রান্ত স্থান যেখানে হোক ঐ ঔষধ দরুন কাজ করে।

১১). ACID FLOURICUM 200

নখের কিনারায় বা শরীরের ছোট ছোট স্থানে এবং ভ্রুর ওপর থেকে কপাল পযন্ত ছাড়া ছাড়া লালাভ সোরিয়াসিস এবং তাতে আঁশও উঠে। 

১২). TEUCRIUM M    200

ডান হাতের আঙুলে সোরিয়াসিস।  রাতে চুলকানি বেশি হয় এবং গোড়ায় পুঁজ জন্মে। 

১৩). THYROIDINUM 3X  

অটো ইমিউন ডিজঅর্ডার রুগীদের ক্ষেত্রে এই ঔষধ ভালো কাজ করে। তাই  অন্য ঔষধের সাথে এই ব্যবহার করা যেতে পারে। 

১৪). Hydrocotyl As Q + Berberis Aq. Q +  Azadirecta Ind. Q             ১০ঃ১০ঃ১০ঃ৭০( নারিকেল তেল বা অলিভওয়েল তেল)  ১০০ মিশিয়ে লাগানো যেতে পারে। এতে ত্বক মসৃন থাকবে।  দিনে  দুই বার ব্যবহার করবেন। 

*★*★*★সোরিয়াসিস রোগের কিছু ঘরোয়া চিকিৎসার কথা বলছি ★*★*★ 

১). হলুদ গুড়ো বা কাঁচা এক গ্রামের মতো খাবার তালিকায়  রাখবেন, সকালে খালি পেটে খেলে ভালো, বা অন্য সময়ও নেওয়া যেতে পারে, তবে প্রতি দিন খেতে হবে। হলুদে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট,  অ্যান্টি ভাইরাল,  অ্যান্টিফাঙ্গাল এবং অ্যান্টি আর্সিনোজেনিক উপাদানসমূহ। এগুলি শরীরকে অটো ইমিউন ডিজঅর্ডার থেকে শরীরকে রক্ষা করবে, বিশেষ করে রক্তে অক্সিজেন প্রবাহ স্বভাবিক করবে।  

২). নিম তেলের সাথে কাঁচা হলুদ মিশিয়ে একান্ত স্থানে স্নানের আধ ঘন্টা আগে লাগিয়ে স্নান করবেন, এখানে বলে রাখা ভালো বাড়িতে তৈরি করে ব্যবহার করবেন। যে কোন কোম্পানি তৈরি নিম তেলে কেমিক্যাল মেশানো থাকে। 

***বিশেষ কথা ***

সোরিয়াসিস রোগীরা কখনও কোন সবান, পেট্রোলিয়াম জেলি, কসমেটিক ব্যবহার করবেন না, প্রয়োজনে নিম পাতা জলে ফুটিয়ে, জলের মিশিয়ে স্থান করুন।

★*★★*বিশেষ কথা জেনে রাখা ভালো। ★* ★★* ঃ     

শরীর কে রোগ মুক্ত করতে প্রতিদিন আহারে ৫০% খাবার ফল এবং স্যালাট খান অথাৎ কাঁচা পাকা ফল কাঁচা সব্জি খান এতে শরীরে পটাসিয়াম ও সোডিয়াম পরিমাণের সমতা বজায় রাখে। পটাসিয়াম ও সোডিয়াম ১ঃ১ থাকলে কোন রোগ আক্রান্তের হওয়া র  সম্ভাবনা কম থাকে । হলেও autophagy মাধ্যমে শরীর তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়